শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১২

জাতিকে noশিক্ষিত করার সহজ উপায়…



  • স্থান: বাংলাদেশ
  • কাল: বর্তমান সময়
  • চরিত্র: অভিভাবক, স্পাইনাল সার্জন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং হেলিকপ্টার পাইলট তার ক্রুরা
প্রথম দৃশ্য: স্পাইনাল সার্জনের চেম্বার
অভিভাবক (উদ্বিগ্ন কণ্ঠে): স্যার, গভীর বিপদে পড়ে আজ এই সাত সকালেই আপনার কাছে আসতে বাধ্য হয়েছি। এত ভোরে ডিস্টার্ব করার জন্য মাইন্ড করবেন না স্যার।
স্পাইনাল সার্জন (শান্ত স্বরে): আপনিই কি পেশেন্ট? বলুন, কি হয়েছে।
অভিভাবক : না। আমি পেশেন্ট নই। আজ সকালে একটা একসিডেন্টে পড়ে তার অবস্থা এখন খুবই আশংকাজনক। খুব সম্ভবত তার মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে। সে আর দাড়াতে পারছে না। যন্ত্রণায় কাৎরাচ্ছে। তাই তাকে এখানে আনতে পারিনি। আপনাকেই তার কাছে যেতে হবে স্যার। প্লিজ।
সার্জন (কাগজ ও বলপয়েন্ট বের করে লিখতে উদ্যত হয়ে): পেশেন্টের নাম?
অভিভাবক: জাতি।
সার্জন: বয়স?
অভিভাবক: উনচল্লিশ।

সার্জন: পুরুষ, না নারী?
অভিভাবক: উভলিঙ্গ।
সার্জন (লেখা থামিয়ে অবাক চোখে): আপনার পেশেন্টের নাম অদ্ভুত এবং লিঙ্গও…
অভিভাবক: আমি সত্যি বলছি স্যার। একসিডেন্টের বিবরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। আমার পেশেন্ট গোটা বাংলাদেশি জাতি, যার জন্ম হয়েছিল ঊনচল্লিশ বছর আগে এবং যার পুরুষ ও নারী উভয় লিঙ্গই আছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, এই সর্বজন স্বীকৃত বাক্যটি আপনি নিশ্চয়ই জানেন। আজ সকালে খবরের কাগজ পড়ে জাতি জানতে পারে অতি অপ্রত্যাশিতভাবে আওয়ামী লীগ সরকার যানজটসহ বিভিন্ন কারণে আগামীকাল শনিবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমমানের ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে আগামী সোমবার থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব প্রাইমারি স্কুলেও। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি থাকবে। এ আকস্মিক ঘোষণাটি পড়ার পরপরই জাতি কাৎ হয়ে পড়ে যায়। যন্ত্রণায় কাৎরাতে থাকে। মনে হয় জাতি তার মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে।
সার্জন (গুরুগম্ভীর মুখে ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে): আজ শুক্রবার ১৩ আগস্ট। ফ্রাইডে দি থার্টিনথ! পশ্চিমের বহু দেশে মনে করা হয় যদি কোনো শুক্রবার মাসের তের তারিখে পড়ে যায় তাহলে সেদিন কিছু বিপদ ঘটতে পারে। ইন ফ্যাক্ট, এই বহুল প্রচলিত কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে হলিউড এখন পর্যন্ত আটটি হরর মুভি বানিয়েছে যাদের নাম, ফ্রাইডে দি থার্টিনথ, ফ্রাইডে দি থার্টিনথ পার্ট টু, ফ্রাইডে দি থার্টিনথ পার্ট থ্রি, ইত্যাদি। আমি এই কুসংস্কারে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এর একটা ভিত্তি আছে। সত্যিই তো আজ শুক্রবার ১৩ আগস্ট জাতি তার মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছে।
অভিভাবক (কাতর স্বরে): স্যার, একটা কিছু করুন। একটা পাগল সরকারের পাল্লায় পড়ে এভাবে একটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে? সারা দেশের ছেলেমেয়েরা এক মাসেরও বেশি সময় জুড়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকবে?
সার্জন (চিন্তিত মুখে): দেখুন, আপনার পেশেন্টের যা হয়েছে, তাকে আমরা, স্পাইনাল সার্জনরা এবং নিউরো সার্জনরা সংক্ষেপে বলি এসসিআই (SCI)। অর্থাৎ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি (Spinal Chord Injury)। এর ফলে, আহত ব্যক্তির চলাফেরার ক্ষমতা অথবা সকল শারীরিক অনুভূতি সম্পূর্ণ তিরোহিত হতে পারে। কোনো ট্রমায়, যেমন কার একসিডেন্ট, বন্দুকের গুলি, হঠাৎ পড়ে যাওয়া অথবা কোনো রোগে, যেমন পোলিও, স্পাইনা বাইফিডা, ফ্রেডারিকস, ইত্যাদিতে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হতে পারে। তবে ইনজুরি হলেই যে স্পাইনাল কর্ড ভেঙে যাবে, তেমনটা না-ও হতে পারে। স্পাইনাল কর্ড না ভাঙলেও ক্ষমতা ও অনুভূতি চলে যেতে পারে।
অভিভাবক (হতবাক মুখে): তাই?
সার্জন: বিষয়টা আমি আরেকটু বুঝিয়ে বলছি। মানবদেহের কোমর থেকে ঘাড় পর্যন্ত মেরুদণ্ড গঠিত হয় সাধারণত তেত্রিশটি হাড়ের বা ভারটিব্রা (Vertebra)-র সমন্বয়ে যার মধ্যে থাকে স্পাইনাল কর্ড। ভারটিব্রা অথবা স্পাইনাল কর্ড কোনো ইনজুরিতে সাময়িক অথবা স্থায়ীভাবে মানুষকে অবশ বা অচল করে দিতে পারে। জাতির সম্ভবত সেটাই হয়েছে। আজ ফ্রাইডে দি থার্টিনথ…
অভিভাবক: এসব তত্ত্ব কথা বুঝে আমার কি লাভ? আমার পেশেন্ট তো যন্ত্রণায় কাৎরাচ্ছে। একটা চিকিৎসার কথা বলুন তাড়াতাড়ি, প্লিজ।
সার্জন: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্পাইনাল কর্ড সার্জন হচ্ছেন ড. এম. ইদ্রিস। কিন্তু স্ট্রোক হবার পর তিনি এখন কম কাজ করছেন। তাছাড়া যতদূর জাতি বর্তমান প্রশাসনের হয়রানির শিকারও তিনি হয়েছেন। শুধু তিনিই নন, পিজি হসপিটাল, যাকে এখন বলা হয় বিএসএমএমইউ হসপিটাল, তার উনপঞ্চাশজন ডাক্তারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ত্রিশজনেরও বেশি টিচিং ডাক্তার। এছাড়া বহু সরকারি ডাক্তারকে আচমকা বদলি করা হয়েছে। এমনকি এক বছরের মধ্যে একজনকে চারবার বদলি করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জাতির চিকিৎসার ভার কেউ নিতে চাইবেন না। কোনো কারণে এ সরকারের বিরাগভাজন হবার বুকের পাটা কোনো ডাক্তারেরই নেই। সরি। আমি কিছু করতে পারবো না।
অভিভাবক (হতাশ মুখে): তাহলে আমি কি করবো?
সার্জন: আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. রুহুল হক-এর কাছে যান। তার সাহায্য চান। তিনি নিজে ট্রমা সেন্টার-এর প্রতিষ্ঠাতা।
দ্বিতীয় দৃশ্য : স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অফিস
অভিভাবক: শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, এ কথায় আপনি বিশ্বাস করেন?
স্বাস্থ্যমন্ত্রী (বিরক্ত মুখে): দেখুন আমরা সবাই মহাব্যস্ত আছি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি নিয়ে। প্রাসঙ্গিক কথা বলুন। অপ্রাসঙ্গিক কথা শোনার সময় আমার নেই।
অভিভাবক: আমি প্রাসঙ্গিক কথাই বলতে এসেছি। একটা ট্রমাতে আমার পেশেন্ট জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে। তার ইমিডিয়েট টৃটমেন্টের জন্য আপনার পরামর্শ ও সাহায্য দরকার। আপনিই তো ট্রমা সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী: জাতির কেইস খুব সিরিয়াস ও কমপ্লেক্স। এত জটিল কেইসের কোনো চিকিৎসা আমার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। হয়তো একটা মেডিকাল বোর্ড গঠন করতে হতে পারে যেখানে থাকবেন মন্ত্রিসভার অন্য কিছু সদস্য। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হবে না। আমারই কলিগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পিছলে পড়ে কোমর ভেঙেছিলেন। তিনি ভর্তি হয়েছিলেন আমারই ট্রমা সেন্টারে। কিন্তু সেখানে কিছুদিন থেকে চলে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকেই সুস্থ হয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তবে…
অভিভাবক (জিজ্ঞাসু চোখে): তবে কি?
স্বাস্থ্যমন্ত্রী: তবে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অগাধ বিশ্বাস শামসু পাগলার ওপরে। এমপি হবার আগে তিনি দোয়া নিতে গিয়েছিলেন পীর শামসু পাগলার মাজারে। মন্ত্রী হবার পরেও তিনি দেখা করেছেন শামসু পাগলার সঙ্গে। জানি না, সিঙ্গাপুর ডাক্তারদের চিকিৎসায়, নাকি, শামসু পাগলার দোয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুস্থ হয়েছেন।
অভিভাবক: ধন্যবাদ এই ইনফর্মেশনের জন্য। জাতির ভবিষ্যৎ আমি কোনো পাগলের হাতে তুলে দিতে পারবো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমি যাবো না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী: তাহলে আপনি চলে যান শিক্ষামন্ত্রী মি. নুরুল ইসলাম নাহিদ-এর কাছে। তিনি সৎ লোক। আমরা দুজনই ছাত্র ইউনিয়ন এবং বামপন্থী রাজনীতি করতাম। তিনি নিশ্চয়ই জাতির চিকিৎসার একটা উপায় বাতলে দেবেন। আমি তাকে ফোন করে দিচ্ছি।
তৃতীয় দৃশ্য: শিক্ষামন্ত্রীর অফিস
অভিভাবক: আপনি তো শিক্ষামন্ত্রী। আপনি কি বিশ্বাস করেন শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড?
শিক্ষামন্ত্রী (হতাশ সুরে): আগে তাই জানতাম এবং বিশ্বাসও করতাম। এখন সাতপাকে বাধা পড়ে গিয়েছি। দৈনিক সমকাল-এর মালিক-প্রকাশক মি. এ কে আজাদ-এর একটি বক্তব্য আপনাকে পড়ে শোনাতে চাই। (ড্রয়ার থেকে ১ জুলাই ২০১০-এর দৈনিক সমকাল বের করে) এ কে আজাদ বলেছেন, গত অর্থবছরে ব্যবসায়ীরা সরকারকে ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছেন। বলা হয়, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এখন বলার সময় এসেছে, ব্যবসায়ীরাই জাতির মেরুদণ্ড। আমাদের সরকারকে ব্যবসায়ীরা কন্ট্রোল করছেন কি না, অথবা ইনডিয়া কন্ট্রোল করছে কি না, অথবা ইনডিয়া অনুগ্রহীত ব্যবসায়ীরা কন্ট্রোল করছেন কি না, সেটা আমি জানি না। আমি শুধু জানি আমি খুব বিপদে আছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেয়েছিল ১০ রমজান থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে। কিন্তু এর আগে যানজট নিরসনে ব্যবসায়ী ও ঢাকা মহানগর পুলিশ রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানিয়েছিল।
অভিভাবক: আর তারপর আপনি ১২ আগস্টের ঘোষণায় বলেছেন, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে প্রতিবারই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি দেয়া হয়। এবার ছুটি কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। অনেক শিক্ষক রোজা রাখেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও রোজা রাখেন। সবার সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে–সবার সুবিধার্থে বলতে আপনি কি বোঝাতে চান? এ সবাইটা কারা? যানজটে আটকে যাওয়া মোটরকার সিএনজি ড্রাইভার অথবা রিকশাওয়ালারা? এ কে আজাদের মতো সুব্যবসায়ী কিন্তু নোশিক্ষিত মিডিয়া মালিক এবং তাদের বেতনভোগী সম্পাদক ও সাংবাদিকরা? নাকি আপনার মতো নোশিক্ষিত মন্ত্রী-পলিটিশিয়ানরা? এরা কারা? দেশের শিক্ষা ধ্বংস করার অধিকার এদের কে দিয়েছে? এই সরকারের এই সিদ্ধান্ত কোনো অভিভাবকের সুবিধার্থে হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী: নোশিক্ষিত?
অভিভাবক: হ্যা। নোশিক্ষিত। তবে এই নো ইংরেজি know নয়। এই নো ইংরেজি no। আপনারা সবাই noশিক্ষিত। কোনো এক সময়ে আপনারা কিছু শিক্ষা পেয়েছিলেন। সুতরাং আপনাদের অশিক্ষিত বলা যাবে না। এবং সেসব শিক্ষা নিশ্চয়ই ভালো ছিল, যার ফলে আপনারা সফল ব্যবসায়ী, সম্পাদক-সাংবাদিক ও মন্ত্রী-পলিটিশিয়ান হতে পেরেছেন। তাই আপনাদের কুশিক্ষিতও বলা যাবে না। তাহলে আপনারা কি? আপনারা সবাই নোশিক্ষিত। অর্থাৎ, আপনারা নিজেরা শিক্ষার সুবিধা পেয়ে এখন অন্যদের শিক্ষা দিতে চাইছেন না। শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। আচমকা টেলিভিশন ও দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে একটি দুর্বোধ্য ঘোষণা দিয়ে দেশের সব স্কুল-কলেজ এক মাসের জন্য বন্ধ করে দিলেন! এমনকি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো? এত সার্বিক ক্ষমতা আপনাদের কেউ দেয়নি। আপনারা যুদ্ধ অপরাধীর বিচার করতে চান। আর আমি চাই আপনার মতো শিক্ষা অনাগ্রহীদের বিচার করতে।
শিক্ষামন্ত্রী: আপনি খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছেন। নিজেকে সংযত করুন।
অভিভাবক: দেখুন নোশিক্ষামন্ত্রী, আমি কিছু সত্য কথা আপনাকে বলছি। যে সত্য কথা কেউ আপনাকে বলতে সাহস করবে না। তাছাড়া আপনার আশপাশে যারা আছেন তাদের শিক্ষা ও কর্মপরিধি এখন ব্যক্তি বন্দনা ও ব্যক্তি পূজায় সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তারা সবাই এখন নোশিক্ষিত। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হবার আগে ১ অক্টোবর ১৯৯৬-এ লেবার পার্টির বার্ষিক কনফারেন্সে টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন, আমার সরকারের তিনটি প্রধান অগ্রাধিকার কি হবে সেই প্রশ্নটি যদি করেন তাহলে তার উত্তর হবে, শিক্ষা, শিক্ষা এবং শিক্ষা (Ask me my three main priorities for Government and I tell you: education, education and education)। টনি ব্লেয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তার কথা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। তাই বৃটেন এখনও একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র রূপে বিশ্ব রাজনীতিতে ভূমিকা রাখছে। একই আদর্শে দীক্ষিত ম্যাডাম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে এপ্রিল ২০০৬-এ আমেরিকার প্রভাবশালী সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনে একটি ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। সে বিষয়ে টাইম লিখেছিল, (বাংলাদেশে) শতভাগ শিশু স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষায় মেয়েরা পাচ্ছে সমান অধিকার। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে। একটি রক্ষণশীল মুসলিম দেশের নেত্রী হয়েও এগুলো তিনি লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। খালেদা সরকারের আমলে চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর সূচনা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নতি বিদেশে বহুল প্রশংসিত হয়েছিল। আর আপনারা ডিজিটাল যুগে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখিয়ে এখন আক্ষরিকভাবেই বাংলাদেশকে অন্ধকার যুগে নিয়ে গিয়েছেন। দেশের অধিকাংশ স্থান চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুতের অভাবে অচল বা অন্ধকার থাকছে। আপনারা ব্যস্ত আছেন হামলা, মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ড, টর্চার, জামিন, বিচার, ফাসি, তদন্ত, বদলি, সাসপেন্ড এবং সর্বোপরি ব্যক্তি বন্দনা ও ব্যক্তি পূজা নিয়ে। শিক্ষাকে শুধু অবহেলাই নয়, সর্বশেষ এই ঘোষণা দিয়ে শিক্ষাকে সাময়িক নির্বাসনে পাঠিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী (কাচুমাচুভাবে): আমি নিরুপায়।
অভিভাবক: আপনার ঘোষণাটি দুর্বোধ্য বলেছি এই কারণে যে, যদি যানজটের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয় তাহলে শুধু রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করলেই হতো। সারা দেশের কেন? আর যদি রোজা রাখার সুবিধায় করা হয় তাহলে সেটা যে আপনাদের সেকুলার নীতির বিরোধী সেটা কি বিবেচনা করেছেন? এখন যদি মেজর জেনারেল সি.আর দত্ত-র নেতৃত্বে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদ তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনের সুবিধার্থে আরো দীর্ঘ ছুটি চায় তাহলে আপনারা কি বলবেন? আপনারা কি বিবেচনা করছেন এই দীর্ঘ এক মাস ছুটিতে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীরা কিভাবে সময় কাটাবে? আর শিক্ষকদের বেতন আমরা অভিভাবকরাই বা কেন দেব? সে যাই হোক। আপনি হয়তো জানেন না, বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই বলেছেন, তাদের সন্তানদের নিয়ে স্কুলে এসে এক মাসের হোমওয়ার্ক বুঝে নিতে। তবে তারা এটাও বলে দিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ড্রেস না পরিয়ে সাদা পোশাকে যেন স্কুলে আনা হয়। কাদো বাঙালি, কাদো পোস্টার প্রেরণায় ছাত্রছাত্রীদের কিছু কান্নাকাটি করার জন্য প্রস্তুত করে স্কুলে আনার উপদেশও দিয়েছেন। আশা করি বুঝতেই পারছেন, আওয়ামী ভীতি এখন কোন পর্যায়ে এসেছে।
শিক্ষামন্ত্রী: আই অ্যাম সরি।
অভিভাবক: সরি বললে আমার কোনো লাভ হবে না। আমার ছেলেমেয়ের জন্য বেতনটা ঠিকই স্কুলকে দিতে হবে। অথচ তারা কোনো শিক্ষা পাবে না। সুতরাং নোশিক্ষা মন্ত্রী, যদি আপনি আমার বক্তব্যের সঙ্গে একমত হন এবং যদি আপনি বিশ্বাস করেন শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, তাহলে আপনি পদত্যাগ করুন।
শিক্ষামন্ত্রী: সেটা সম্ভব নয়। পদত্যাগ করার স্বাধীনতা আমার নেই। আপনি নিশ্চয়ই জানেন ইতিপূর্বে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মি. সোহেল তাজ, যিনি এখন আমেরিকায় আছেন, তার পদত্যাগ নিয়ে কেমন লম্বা নাটক হয়েছিল!
হঠাৎ বাইরের প্রচণ্ড গর্জন ঘরে শোনা গেল। ঘড়ঘড়। ঘড়ঘড়। শিক্ষামন্ত্রী ছুটে গেলেন জানালার দিকে।
শিক্ষামন্ত্রী (ডেস্কে ফিরে এসে সবিস্ময়ে): দেখছি একটা হেলিকপ্টার নেমেছে।
কিছুক্ষণ পরেই হেলিকপ্টারের পাইলট তার ক্রুদের নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর অফিসে এলেন।
হেলিপাইলট: এই দেখুন আমার আইডি কার্ড। আমি ইনডিয়ান এয়ার ফোর্সে কাজ করি। এয়ার এমবুলেন্স চালাই। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. প্রণব মুখার্জি ইমার্জেন্সি কলে এখানে আসতে বলেছেন। আপনাদের পেশেন্ট জাতিকে টৃটমেন্টের জন্য ইনডিয়ান হসপিটালে ট্রান্সফার করার জন্য এয়ার এমবুলেন্স পাঠিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী (বিগলিত মুখে): থ্যাংক ইউ সো মাচ। থ্যাংক ইউ।
অভিভাবক (প্রচণ্ড রাগান্বিত মুখে): কি বলছেন আপনি? জাতিকে নিয়ে যাবেন ইনডিয়াতে?
হেলিপাইলট (স্মিত মুখে): আপনাদের বিডিআর তো ফিনিশড। বর্ডার তো আগেই উঠে গেছে। বাংলাদেশ আর ইনডিয়ার মধ্যে সীমারেখা টানার বৃথা চেষ্টা আর করবেন না। আর তাছাড়া এটাও তো সত্যি যে বাংলাদেশের সামর্থবান ব্যক্তিরা টৃটমেন্টের জন্য ইনডিয়াতে যান। জাতির টৃটমেন্টের জন্য যেহেতু আপনার সামর্থ নেই সেহেতু মি. প্রণব মুখার্জি স্বতঃপ্রণোদিত এবং সদয় হয়ে আমাদের এয়ার এমবুলেন্স পাঠিয়েছেন। আমরা আশা করি জাতি সুস্থ হয়ে যাবে এবং পরবর্তীকালে কোলকাতা থেকে কোদাইকানাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়তে পারবে। সেইন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, হেয়ার স্কুল, মিত্র ইন্সটিটিউশন, প্রেসিডেন্সি কলেজ–এসব জায়গায় জাতি পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে। সুতরাং আর দেরি করবেন না। আমাদের সঙ্গে কোঅপারেট করুন। (ক্রুদের প্রতি আঙুল দেখিয়ে) পেশেন্টকে খুব কেয়ারফুলি কপ্টারে ওঠাও।
অভিভাবক হতবাক হয়ে দেখতে লাগলেন এয়ার এমবুলেন্স ক্রুদের কার্যক্রম।
একটু পরেই হেলিকপ্টারের ব্লেডগুলো আবার চরকি খেতে শুরু করলো।
ঘড়ঘড়। ঘড়ঘড়।
প্রচণ্ড শব্দ শুরু হলো।
ধুলাবালি উড়তে লাগলো।
জোরে বাতাস বইতে লাগলো।
হেলিকপ্টার টেক অফ করলো।
১৬ আগস্ট ২০১০
(সম্পূর্ণ কাল্পনিক ঘটনা ও সংবাদ)

1 টি মন্তব্য:

  1. রম্য বাশঝাড়। ভাল লাগলো বিচরন করতে। তবে শিক্ষা ছুটির বিষয়টার থেকেও এখন আরো জটিল কার্যক্রমের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার সেটি শিক্ষা ট্যাস্ক। সে বিষয়ে লেখকের এখটি প্রতিবেদন আশা করছি। ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন